মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি।। মিঠাপুকুরের মির্জাপুর কাদেরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, মামলা দিয়ে হয়নারী এবং অভিভাবক ও স্থানীয়দের লাঞ্চিত করার ঘটনায় চরম অসন্তোষের সৃস্টি হয়েছে অভিভাবক ও এলাকাবাসির। তারা অবিলম্বে ওই প্রধান শিক্ষকের দৃস্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারণ দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত করা হয়েছে।
এলাকাবাসির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষিকার দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত করতে যান রংপুর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) জাকারিয়া রহমান ও থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর। এসময় শত শত এলাকাবাসি ও অভিভাবক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা মামলাটিকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহার এবং প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষিক নুরানী পারভীন আনসারীর বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ পন্থায় কমিটি গঠনের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ করেন স্থানীয় ডফিন নামে এক অভিভাবক। ইতোমধ্যে, অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে অভিযোগকারী ডফিন মিয়াকে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষিক জুতা পেটা করেন। এসময় অন্য শিক্ষকেরা তাঁকে নিবৃত্ত করে উদ্ধার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ঘটনার পর পরই প্রধান শিক্ষিক অসুস্থ্য হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে তাকে মারপিট করা হয়েছে বলে, মিথ্যা প্রচারণা চালান। এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় ডফিন মিয়া ও প্রধান শিক্ষিক পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে পুলিশ।
মামলা তদন্তে রংপুর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) জাকারিয়া রহমান ও মিঠাপুকুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থলে যান। এসময় দেড় শতাধীক অভিভাবক প্রধান শিক্ষিক নুরানী পারভীন আনসারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মামলার বিবরণ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তারা। উল্টো প্রধান শিক্ষককেই অপসারণের দাবি জানান। অভিভাবক খাদিজা বেগম, ইছমোতারা, নাসিমা বেগম, পারভীন আক্তার বলেন, ‘হেড ম্যাডামের জন্যেই স্কুলের পরিবেশ খারাপ হচ্ছে। এতে, ঠিকমত লেখাপড়া হচ্ছে না। আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য তাঁকে এই বিদ্যালয় থেকে অপসারণ চাই।’ একই মত প্রকাশ করেন আরও দেড় শতাধীক অভিভাবক।
এছাড়াও, মির্জাপুর কাদেরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ (প্রধান শিক্ষিকসহ) জনের মধ্যে ৭ শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষিকার নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা অতিষ্ট। তবে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরানী পারভীন আনসারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বহিরাগত যুবক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে আমাকে মারপিট করেছে। তাই, আমি মামলা করেছি।
মিঠাপুকুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘটনার তদন্ত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহি অফিসার মামুন-অর-রশীদ বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।